মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় । শীতের প্রকোপ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিলো । বাড়ির বাহিরে প্রচণ্ড কুয়াশার হাতছানি । দুজন লোক এক হাত দূরত্বে মুখোমুখি দাঁড়ালে কেউ কাউকে দেখতে পায় না । দিনটি ছিল রবিবার । ঠিক ঘড়িতে রাত নয়টা বেজে পাঁচ মিনিট । মাসুম তার বন্ধুর জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে বাড়ি থেকে বের হল । বন্ধুর বাড়ি আধ কিলোমিটার দূরে । হাতে একটি উপহারের বাক্স নিয়ে মাসুম সামনের দিকে এগুতে লাগলো । কিছুদূর যেতে না যেতেই হটাৎ করে হাত থেকে উপহারের বাক্সটি নিচে পড়ে গেলো । বাক্সটি তুলতে গিয়ে হটাৎ মাসুমের চোখ পড়ল সামনে বসে থাকা একটি মেয়ের দিকে । মেয়েটি দেখতে অনেক সুন্দরী । হাত নেড়ে নেড়ে যেন মাসুমকে সেদিকে যাওয়ার ইঙ্গিত করছে । মাসুম তাকে দেখে বিস্মিত হল, ভাবল “এই অন্ধকার রাতে মেয়েটি এখানে কি করছে” ? কিছুক্ষন পর মেয়েটি মাসুম মাসুম বলে ডেকে উঠলো । মেয়েটি বলল “এদিকে এসো মাসুম” । মাসুম কিছু বুঝে না উঠেই মেয়েটির কাছে গেলো । মাসুম কাছে যেতেই মেয়েটি সুমধুর সুরে বলল “এই শীতের রাতে তুমি কোথায় যাচ্ছ মাসুম, এবং হাতে বাক্সটি কিসের” ? উত্তরে মাসুম বলল “আজ বন্ধুর জন্মদিন তাই উপহার নিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে যাচ্ছিলাম” । মেয়েটি মাসুমের শরীরের দিকে তাকিয়ে বলল “কি অবস্থা ! তুমি তো শীতের প্রকোপে কাঁপিতেছ” । এই নাও বলে মাসুমকে একটি চাদর দিল মেয়েটি । মাসুম সরল মনে চাদরটি গায়ে জড়াল । মাসুম মেয়েটিকে বলল “তোমার নাম কি ? মেয়েটি বলল “হরিণী” । মাসুম মেয়েটিকে আবার বলল “তুমি এত রাতে এখানে কি করছ” ? মেয়েটি বলল “আমি বেড়াতে বেরিয়েছিলাম, কিন্তু রাত হয়ে যাওয়াই এখানে বসে আছি” । তারপর সে মাসুমকে বলল “চল তোমাকে এগিয়ে দিয়ে আসি”। মাসুমও রাজি হল । দুজন একসাথে সামনের দিকে এগুতে লাগলো । হাঁটছে তো হাঁটছে কিন্তু পথ যেন ফুরায় না । যেতে যেতে কিছুদূরে দেখা গেলো একটা ছোট বাড়ি যার চারপাশে রয়েছে সুন্দর ফুলের বাগান । চাঁদের আলোয় সেই বাগান বাড়িটাকে মুক্তোর ঝিলিকের মতো মনে হচ্ছে । মাসুম হরিণীকে বলল “এটা কাদের বাড়ি” ? হরিণী বলল “এখানে আমরা পাঁচ বান্ধবী বাস করি” । এদিকে মাসুম তার বন্ধুর জন্মদিনের এবং হাতে থাকা উপহারের বাক্সটির কথাও ভুলে গেলো । কখন যে উপহারের বাক্সটি উধাও হয়ে গেলো তাও তার মনে নেই । হরিণী মাসুমকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করতেই চারজন অপরূপ সুন্দরী তরুণী ফুলের ঢালি দিয়ে অভ্যর্থনা জানালো । অন্যদিকে মাসুম তার বন্ধুর বাড়িতে না যাওয়ায় সেই বন্ধুটি খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল । কারণ বন্ধুটি জানত মাসুম তার জন্মদিনে অবশ্যই আসবে । সেই রাতে মাসুম না আসায় পরের দিন সকালে মাসুমের বাড়িতে খবর নিতে গিয়ে বন্ধুটি জানলো যে, মাসুম গত রাতে তার জন্মদিনে যোগদানের জন্য বের হয়েছিলো। কিন্তু মাসুম সেখানেও যায় নি আবার বাড়িতেও নেই । তাই মাসুমের পরিবার ও বন্ধু উভয়ই মহা চিন্তায় পড়ে গেলো । তারা মাসুমকে খোঁজাখুঁজি শুরু করলো কিন্তু কোথাও কোন খোঁজ পেলো না । অন্যদিকে মাসুম ঐ পাঁচজন তরুণীর সাথে খুব আনন্দে সময় কাটাতে লাগলো । তাকে খুব ভালো ও সুস্বাদু খাবার খেতে দেওয়া হল । মাসুমকে ঐ তরুণীরা বলল “আমরা তোমাকে একটা স্বপ্ন শীতের দেশে নিয়ে যাবো”। মাসুম বলল “এখন তো শীতকাল তবে শীতের দেশ বলতে ঠিক বুঝতে পারলাম না”। হরিণী বলল “আমরা তোমাকে যে শীতের দেশে নিয়ে যাবো সেখানে থাকবে না কোন দুঃখ-কষ্ট, থাকবে চিরসুখ, থাকবে ফুলে-ফলে ভরা দেশ, অপরূপ সুন্দর সেই শীতের দেশ, সেখানের মানুষেরা অনেক দয়ালু, যেখানে একবার গেলে কেউ আর ফিরে আসতে চায় না, যেখানে নেই কোন শীতের কষ্ট, যেখানের আলো বাতাসে জুড়ায় মানুষের মন-প্রাণ”। মাসুম তা শুনে রাজি হয়ে গেলো । ঐ তরুণীরা বলল “কাল ভোর হলেই তুমি সেই স্বপ্ন শীতের দেশ দেখতে পাবে, দেখতে পাবে সব অপরূপ দৃশ্য” । বলতে বলতে অনেক রাত হয়ে গেছে তাই সবাই ঘুমোতে গেলো । পরের দিন সকালে মাসুম ঘুম থেকে উঠে দেখল সেই তরুণীরা কেউ নেই। সে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল, তারপর মনে মনে বলল হয়তো তারা কোন কাজে বের হয়েছে । সে তখন বাড়ির বাইরে বের হল। বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর মাসুম দেখতে পেলো “কি সুন্দর দৃশ্য”! ফুলে ফুলে ভরা চারদিক যেখান থেকে মধুর সুবাস আসছে । কিছুদূর যেতেই দেখল খেজুর গাছ থেকে অঝর ধারায় রস পড়ছে, প্রতিটি গাছ রঙিন ফলে পরিপূর্ণ, আকাশে অপরূপ সুন্দর পাখি মনের আনন্দে উড়ছে, জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসলে ভরপুর । রাস্তার পাশেই প্রবাহমান একটি স্রোতস্বিনী নদী । নদীতে জেলেরা নৌকা বেয়ে মাছ ধরছে । একটি জালে অনেক মাছ ধরা পড়ছে । নদীর ওপারে দেখা যায় বিশাল এক সবুজ বন, যেখানে ছোট বড় হরিণ, বানর, ও বিভিন্ন জাতের প্রাণী ও দেখা গেলো । নর-নারীরা এদিক-সেদিক কাজে মনোযোগী । দেখা যাচ্ছে একজন আরেক জনকে কাজে সাহায্য করছে । সূর্যের আলো যখন চোখে আসে তখন মনে হয় মুক্তার আলো ঝরছে। হালকা শীত অনুভূত হলেও গরম কাপড়ের প্রয়োজন নেই । সবকিছু দেখে মাসুম খুব খুশি। দেখতে দেখতে কখন যে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এল , তা ঠাহর করা গেল না। সন্ধ্যার পর ঐ তরুনীরা এলে মাসুম তাদেরকে প্রশ্ন করলো , “আমাকে এভাবে একা ফেলে রেখে তোমরা কোথায় ছিলে” ? উত্তরে সবাই বলল, “এটা একটা স্বপ্ন শীতের দেশ, যেখানে থাকবে না কোন রাগ, কোন দ্বন্দ্ব ; থাকবে শুধু সুখ , শুধু আনন্দ । এই স্বপ্ন শীতের দেশে আমরা স্বপ্ন পরী নামে পরিচিত । তাই আমরা দিনের বেলায় অদৃশ্য হয়ে যাই আর রাত্রি বেলা ফিরে আসি। এখানে যাদেরকে দিনের বেলায় দেখা যায় তাঁরা সবাই মানুষ । তাদেরকে জঞ্জাল বিদ্বেষপূর্ণ দেশ থেকে আমরা এখানে নিয়ে আসি । তাদেরকে বিভিন্ন কাজের ব্যবস্থাও করে দেই। সুতরাং তুমিও চাইলে এই স্বপ্ন শীতের দেশে সুন্দর ভাবে জীবনযাপন করতে পার। এখানে তোমার সাথে আমরা একটি সুন্দরী মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেব। তোমার থাকবে না কোন অভাব, থাকবে না কোন দুঃখ ; থাকবে শুধু স্বপ্নের সেই শীত, আর থাকবে শুধু সুখ। কিন্তু ততক্ষণে মাসুমের মনে পড়ে গেল তার মা বাবার কথা , বন্ধুর কথা, আত্মীয়-স্বজনদের কথা , শীতের রাতে ঘটে যাওয়া সেই ঘটনার কথা। তখন সে বলল, “আমি আমার সেই দেশে ফিরে যেতে চাই , যেখানে আমার মা বাবা, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজন রয়েছেন”। তখন ঐ পাঁচজন তরুনী মাসুমকে সেই আগের জায়গায় ফিরিয়ে দিয়ে গেল। সেজন্য মাসুম তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ জানালো। আবার দেখা করার আমন্ত্রন ও জানালো । ঐ তরুনীরাও বলল, “আমরা মাঝে মাঝে তোমাকে দেখতে আসব” । মাসুমও বলল, “আমি সেই দিনই সেই স্বপ্ন শীতের দেশে যাবো , যেদিন আমি আমার মা-বাবা, বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদেরকে সেই দেশে নিয়ে যেতে পারব”। এদিকে অনেক দিন পর মাসুম বাড়ি ফিরে আসলে সবাই তাকে ঘিরে ধরল কি হয়েছিল তা জানার জন্য। তখন মাসুম তার সেই স্বপ্নের শীতের দেশ ও ঐ পাঁচজন স্বপ্নপরীর কথা বলতে লাগলো। আর অন্যরা সবাই তার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে স্বপ্ন শীতের দেশ ও স্বপ্নপরীদের কাহিনি শুনতে লাগলো। অন্যরা সবাই ভাবল ইশঃ যদি আমরা সবাই সেই স্বপ্ন শীতের দেশটা একবার ঘুরে আসতে পারতাম........................!!!!!!!!!!
১৯ নভেম্বর - ২০১১
গল্প/কবিতা:
১৩ টি
বিজ্ঞপ্তি
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
-
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
-
তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।
আগামী সংখ্যার বিষয়
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ নভেম্বর,২০২৪